অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য মানবসম্পদের গুরুত্ব খুব বেশি। উন্নয়ন ও প্রযুক্তির প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রয়োজন মানবসম্পদের। দক্ষ ও প্রশিক্ষিত মানবসম্পদের মূল্য তুলনামূলকভাবে বেশি। কাজেই উন্নত ও উন্নয়নশীল সব দেশের জন্য উন্নয়নের প্রতিটি ক্ষেত্রে মানবসম্পদের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব রয়েছে ।
মানবসম্পদের সংজ্ঞা (Definition of Human Resource
)
জনসংখ্যার যে অংশ যখন শিক্ষা ও দক্ষতার ভিত্তিতে শ্রমশক্তিতে পরিণত হয় তখন তাদেরকে মানবসম্পদ বলে। তবে কোনো দেশের ভূমি ও মূলধনকে বস্তুগত সম্পদ বলে। দেশের প্রাকৃতিক সম্পদগুলোকে কাজে লাগিয়ে অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত করতে দক্ষ মানবশক্তির যোগান থাকা প্রয়োজন । অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য বস্তুগত সম্পদ ও মানবসম্পদ এ দুটি-ই জরুরি । উপযুক্ত শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, স্বাস্থ্যসম্মত বাসস্থান, চিকিৎসাসেবা ইত্যাদির মাধ্যমে মানুষের কর্মক্ষমতা ও দক্ষতা বৃদ্ধির প্রক্রিয়াকে মানবসম্পদ উন্নয়ন বলে । দক্ষ মানবসম্পদ অর্থনৈতিক উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ।
মানবসম্পদ উন্নয়নের পদ্ধতি (Methods of Human Resource Development) অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য মানব সম্পদের গুণগত মান উন্নয়ন করা প্রয়োজন হয় । এ উদ্দেশ্যে নিচের পদ্ধতিসমূহের উল্লেখ করা যেতে পারে ।
১. শিক্ষা : জনসংখ্যাকে কর্মক্ষম ও দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তরিত করতে হলে শিক্ষা ও কর্মমুখী শিক্ষার সম্প্রসারণ প্রয়োজন । শিক্ষা ব্যক্তিজীবন এবং জাতীয় উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য। সুতরাং দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন করে সকলের জন্য কর্মমুখী শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে । একজন মানুষ নিরক্ষর থাকতে পারে কিন্তু তাকে কর্মমুখী শিক্ষাদান করলে তার মানব শক্তির উন্নয়ন হয়। একজন নিরক্ষর মানুষ ভালো ও দক্ষ চাষি হয়ে উৎপাদন কয়েকগুণ বৃদ্ধি করতে পারে । বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে পেশাগত শিক্ষা বা কারিগরি শিক্ষাব্যবস্থা প্রয়োজনের তুলনায় কম । সুতরাং দেশের সর্বত্র কর্মসংস্থানের উপযোগী কারিগরি শিক্ষার প্রসার ঘটানো দরকার। এ উদ্দেশ্যে দেশের কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ও মান বৃদ্ধি করা দরকার। কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত লোক তাদের অর্জিত জ্ঞান বাস্তবে প্রয়োগ করতে পারে ।
২. প্রশিক্ষণ : দেশের শিক্ষিত এবং প্রশিক্ষিত জনবল অধিক উৎপাদনে সক্ষম । প্রশিক্ষণবিহীন শিক্ষিত মানুষের গুণগত মান উন্নয়ন সম্ভব নয়। মানবসম্পদের উন্নয়নের জন্য প্রশিক্ষণ জরুরি। প্রশিক্ষিত শ্রমশক্তিকে অধিক উন্নত প্রযুক্তিগত কর্মে প্রয়োগ করলে তা থেকে প্রাপ্তি অনেক বেশি হয় । তাছাড়া প্রশিক্ষিত লোক কোনো কাজের ক্ষেত্রে দ্রুত ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিয়ে ভালো ফলাফল দিতে পারে ।
৩. জনস্বাস্থ্যের উন্নয়ন : সুষম খাদ্য গ্রহণ, পরিচ্ছন্ন পরিবেশ, প্রভৃতি স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য মৌলিক উপাদান দেশের সব নাগরিককে এ অপরিহার্য উপাদানগুলোর সঙ্গে পরিচিতি ঘটানো দরকার । দেশের যেসব মানুষ ভগ্নস্বাস্থ্য, দুর্বল ও কর্মবিমুখ, তাদের যেকোনো মূল্যে চিকিৎসার সুযোগ-সুবিধা দিয়ে স্বাস্থ্যের উন্নতি করা যায় ।
৪. খাদ্য ও পুষ্টি : দেশের জনশক্তিকে জনসম্পদে রূপান্তরিত করতে হলে সুষম খাদ্য ও পুষ্টি সম্পর্কে জনসচেতন করে তাদেরকে গড়ে তুলতে হবে । এ উদ্দেশ্যে দেশের সরকার, রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তি, ডাক্তার, বিজ্ঞানী, কৃষক, শ্রমিকসহ প্রত্যেকেরই দেশের জনগণকে সচেতন করার জন্য এগিয়ে আসা দরকার ।
৫. উপযুক্ত বাসস্থান : স্বাস্থ্যসম্মত নিরাপদ বাসস্থান মানুষের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি করে । সুতরাং পরিকল্পিত উপায়ে দেশে সরকারি ও বেসরকারি খাতে বাসস্থানের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির ব্যবস্থা রাষ্ট্র থেকে করতে হবে।
৬. নারীর ক্ষমতায়ণ : শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নারী সমাজকে কর্মে নিয়োজিত করার উপযোগী করে গড়ে তোলার মাধ্যমে মানবসম্পদের উন্নয়ন ঘটানো যায়। বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যার অর্ধেক নারী । তাদেরকে ঘরে রেখে অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব নয় । নারী সমাজকে কর্মমুখী শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ দিয়ে কর্মে নিয়োজিত করে মানবসম্পদের উন্নয়ন করা সম্ভব ।
৭. মানবসম্পদ উন্নয়ন পরিকল্পনা : বাংলাদেশের জনগণের কর্মদক্ষতা ও গুণগত মান বৃদ্ধি করার উদ্দেশ্যে মানবসম্পদ উন্নয়নের জন্য সুষ্ঠু পরিকল্পনা প্রণয়ন ও তার বাস্তবায়ন করা দরকার। এ উদ্দেশ্যে প্রণীত পরিকল্পনার বাস্তবায়নের জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় । অর্থাৎ মানবসম্পদের উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা সম্ভব হলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন করা সম্ভব ।
[এই অধ্যায়ের যাবতীয় তথ্যের উৎস: বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা- ২০১৭ ]
Read more